আপনি যখন এই লেখাটি পড়া শুরু করেছেন তখন আমি ধরে নিচ্ছি আপনার একটি অনলাইন বিজনেস আছে বা আপনি অনলাইনে বিজনেস করতে ইচ্ছুক ৷ নতুবা আপনি এই শিরোনাম দেখে লেখা পড়তে শুরু করতেন না।
দেখুন, বিজনেসের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সেলস বাড়ানো ও টাকা কামানো। আবার সেলস বাড়ানোর জন্য প্রয়োজন হচ্ছে বেশির থেকে বেশি কাস্টমার ধরা। পাশাপাশি ব্র্যান্ডিং বা মানুষের ভরসা অর্জনের মাধ্যমে পরিচিতি লাভ করাও বিজনেসের একটি উদ্দেশ্য । আর আপনার অনলাইন বিজনেসের এসব উদ্দেশ্য সহজে পূরণ হতে পারে একটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমেই৷
এই আর্টিকেলটির মধ্যে যে যে বিষয়ে লেখা হবেঃ
- অনলাইন বিজনেস বলতে কি বুঝি?
- ওয়েবসাইট কি?
- ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কিভাবে আপনার অনলাইন বিজনেসটি গ্রো করবে?
(সেলস বৃদ্ধি, নতুন গ্রাহক পাওয়া, ব্র্যান্ডিং)
- নিজের বিজনেসের পাশাপাশি অন্যের বিজনেস থেকেও কিভাবে টাকা কামাবেন?
- পরামর্শ
- শেষ কথা
অনলাইন বিজনেস বলতে কি বুঝি?
বাংলাদেশে অনলাইন বিজনেস হিসেবে অধিকাংশ মানুষ যেটা চিনে অথবা যেটা বেছে নেয় তা হচ্ছে ফেসবুকে বা ইনস্টাগ্রামে বিজনেস করা৷
কারো হয়তো ফেসবুক কিংবা ইনস্টাগ্রামে একটা বিজনেস পেইজ আছে— যার মাধ্যমে তিনি অ্যাড চালিয়ে বিজনেস করছেন, অথবা লাইভে এসে তার পণ্য সম্পর্কে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন মানুষের কাছে এবং তা থেকে বেচা-বিক্রি হচ্ছে এটাকেই আমরা সাধারণত অনলাইন বিজনেস হিসেবে বুঝে থাকি, যদিও অনলাইন বিজনেস প্লাটফর্মটি আরো বিস্তৃত৷
আপনারও হয়তো অনুরুপ কোন বিজনেস রয়েছে কিন্তু আপনি কি জানেন এর কোনটাই আপনার নিজস্ব নয়? মেটা (Meta) কর্তৃপক্ষ চাইলেই আপনার পেইজ বন্ধ করে দিতে পারে, আপনার লাইভের উপর রেস্ট্রিকশন দিতে পারে এবং যে কোন সময় আপনি আপনার বিজনসটি হারাতে পারেন৷ অপরদিকে আপনার ওয়েবসাইটটি একান্তই আপনার ক্রয়কৃত জমির মতো। যেখানে আপনি যেভাবে ইচ্ছে সেইভাবেই বিজনেসটি পরিচালনা করতে পারবেন৷
ওয়েবসাইট কি?
ওয়েবসাইটের পরিচিতি পুরোপুরি লিখতে চাইলে লেখাটি অনেক বড় হয়ে যাবে, তাই এই লেখার শিরোনামের সাথে মিল রেখে যতটুকু না লিখলেই নয় ততটুকু লিখবো এখানে৷
জেনে রাখা ভাল শুধুমাত্র ওয়েবসাইট কি, ওয়েবসাইট কিভাবে ডেভেলপ করতে হয় এবং পরবর্তীতে কিভাবে ওয়েবসাইটটি চালাতে হয়?— এসব নিয়ে কয়েক হাজার শব্দের পূর্ণ একটি আর্টিকেল লেখা যেতে পারে৷
ইন্টারনেট চালাতে গিয়ে আমরা ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার, অ্যামাজন সহ যত সফটওয়ার ইউজ করি বা ওয়েব ব্রাউজিংয়ের মাধ্যমে যত সাইট ভিজিট করি সবগুলোই একেকটা ওয়েবসাইট৷ ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের মধ্য থেকে তারা নিজেদের জন্য একটা অংশ বা কিছু জায়গা কিনে নিয়েছে। সুতরাং আপনি যদি একটি ওয়েবসাইট বানান নিজের বিজনেসের জন্য তাহলে আপনারও নিজস্ব একটা জায়গা কেনা হলো, এবং নিজের ক্রয়কৃত জমিতে আপনি যেভাবে ইচ্ছে সেভাবে দোকান খুলে বিজনেস করতে পারবেন৷ একটি অনলাইন বিজনেসের জন্য এরচেয়ে সেইফ কি আর কিছু হতে পারে?
ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কিভাবে আপনার অনলাইন বিজনেসটি গ্রো করবে?
- সেলস বাড়বে: এটা তো সবাই জানি যে একটি বিজনেসের মূল উদ্দেশ্যই হয়ে থাকে বেশির থেকে বেশি মুনাফা অর্জন, যেটা স্বাভাবিকও বটে৷ এখন আপনি যদি অধিক মুনাফা অর্জন করতে চান তাহলে আপনাকে সেলস বৃদ্ধি করতেই হবে, তাহলেই বেশি মুনাফা লাভ করা সম্ভব৷
আবার সেলস বাড়াতে চাইলে প্রথমে আপনার প্রোডাক্টগুলোকে সুন্দর করে সাজিয়ে কাস্টমারের সামনে উপস্থাপন করতে হবে, যেটা ওয়েবসাইট ব্যতিত সম্ভব নয়৷
আপনি কিন্তু ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামে আপনার সকল পণ্য এমনভাবে সাজাতে পারবেন না যে, কোন কাস্টমার এক ক্লিকেই সব পণ্য দেখতে পারবে৷ ওয়েবসাইটে এই কাজটি সুন্দরভাবে করতে পারবেন, শুধু তাই নয় প্রত্যেক পণ্যের সাথে পণ্যের একাধিক ছবি ব্যবহার করতে পারবেন, কাস্টমারদেরকে ক্যাটাগরি অনুযায়ী পণ্যগুলোকে আলাদা আলাদা করে দেখার সুযোগ করে দিতে পারবেন এবং প্রত্যেকটার সাথেই রেগুলার মূল্য সহ অফার মূল্য লিখে দিতে পারবেন৷ এক কথায় আপনি নিজের মতো করে কাস্টমাইজ করে ডিজাইন করতে পারবেন৷ অপরদিকে অনলাইন বিজনেসের অন্য কোন সাইটে এই কাজটি করতে পারবেন না৷
আপনিই ভেবে দেখুন, কোন কাস্টমার যদি এক ক্লিকে সকল পণ্য দেখতে পারে এবং দাম জিজ্ঞেস করা ছাড়াই জেনে নিতে পারে, তাহলে সে তো ফেসবুক পোস্ট থেকে পণ্যের ছবি দেখে ইনবক্সে গিয়ে দামাদামি করে অর্ডার করার কষ্টটা করতে চাইবে না। বরং সহজ উপায়ে ওয়েবসাইট থেকেই পণ্যটি সংগ্রহ করে নিবে। এতে করে আপনার সেলস ম্যানের খরচও কমবে। আর এভাবেই একটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আপনার অনলাইন বিজনেসটি অন্যদের থেকে সেরা হয়ে উঠতে পারে। সেলস বৃদ্ধি পেতে পারে অনেকগুণ৷ অনলাইন বিজনেসের কম্পিটিশনে আপনার বিজনেসটি হয়ে উঠবে অনন্য।
নতুন নতুন কাস্টমার পাবেন: ধরা যাক, আপনার অনলাইন বিজনেসটি এখন কোন একটি স্যোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে পরিচালনা করছেন বা শুধু স্যোশাল মিডিয়াতে বিজনেস করার প্ল্যান করছেন তাহলে নিজের অজান্তেই কাস্টমারদের একটা বিরাট অংশকে আপনি হারিয়ে ফেলেছেন অলরেডি, চেষ্টা করেও ওই সকল কাস্টমারদের কাছে নিজের বিজনেসটিকে পৌঁছাতে পারবেন না৷ কারণ অনেকেই সময় বাঁচানোর জন্য বা অন্য কোন কারণে স্যোশাল মিডিয়া ইউজ করে না, যার ফলে আপনার বিজনেসটি তাদের পর্যন্ত পৌঁছবে না, আর এই সমস্যার সমাধান হতে পারে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে৷
কীভাবে নতুন কাস্টমার পাবেন ?
যেসব সাইটে মার্কেটিং করছেন, অ্যাড দিচ্ছেন তারা তো সেসব মিডিয়া ইউজই করছে না, কিন্তু তারা যখন অনলাইনে কোন কিছু অর্ডার করতে চাইবে তখন তারা স্বাভাবিকভাবেই গুগলে সার্চ করবে এবং আপনার ওয়েবসাইটটি তাদের সামনে শো করবে । ফলে যাদের কাছে আপনার বিজনেসটি পৌঁছাতে পারছিলেন না তারাও আপনার বিজনেস সম্পর্কে জানতে পারবে এবং ক্রয় করতে পারবে আপনার ওয়েবসাইট থেকে৷ এইভাবে আপনি চাইলে দেশের বাহিরের মানুষের কাছেও আপনার প্রোডাক্টটি বিক্রি করতে পারবেন। যারা সাধারণত স্যোশাল মিডিয়া ইউজ করে না৷
সুতরাং বিভিন্ন ধরণের নিত্য-নতুন কাস্টমার ধরতে চাইলে ওয়েবসাইট সেক্ষেত্রে সহায়ক হবে বলে আশা করা যায়৷
রিটার্গেটিং এড চালাতে পারবেন : এক তো হচ্ছে নতুন নতুন কাস্টমার পাওয়া! আরেকটি হচ্ছে পুরাণ কাসম্টমারকে নতুনভাবে পাওয়া! এটাও সম্ভব হয় ওয়েবসাইটের মাধ্যমে। একটু খুলে বলি! আমরা যারা ওয়েবসাইট বাদে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজনেস করি। সাধারণত এড রান করে সেল করার চেষ্টা করি। এখন যদি আপনার একটা ওয়েবসাইট থাকে তবে ল্যান্ডিং পেইজের মাধ্যমে রিটার্গেটিং এড চালানো সম্ভব হবে। যারা একবার আপনার থেকে ক্রয় করবে বা কোনভাবে এইঙ্গেইজড হবে তাদের কাছে বারবার আপনার এড পাঠানো সম্ভব হবে। যা ওয়েবসাইট ব্যাতীত থাকলে সম্ভব না।
ব্যান্ডিং বা পরিচিতি লাভ হবে: অনেক সময়ই দেখা যায়, ফেসবুকে কোন পণ্যের অ্যাড দেখে পছন্দ হলেও ওই পেইজ থেকে পণ্যটি ক্রয় করা হয় না৷ কারণ তাদের প্রতি হয়তো বিশ্বাস করতে পারছেন না, তাদেরকে আগে টাকা দিলে ধরা খাব কি না এরকম একটা ভয় কাজ করে মনের মধ্যে৷
কিন্তু যখন আমরা গুগলে সার্চ করে কোন বিজনেস সম্পর্কে জানি বা তাদের ওয়েবসাইটে গিয়ে তাদের সম্পর্কে জানতে পারি এবং ওয়েবসাইটে কাস্টমারদের ভাল-মন্দ রিভিউ দেখতে পাই তখন তাদের প্রতি ভরসা তৈরি হয়৷ তাদেরকে বিশ্বাস করা সহজ হয়৷
আবার আপনি চাইলে আপনার ফেসবুক পেইজে আপনার ওয়েবসাইট লিংক দিয়ে আপনার কাস্টমারদের ভিজিট করতে বলতে পারেন, সেক্ষেত্রে ভিজিটর বাড়লে ওয়েবসাইটের মূল্যও বাড়তে থাকবে৷
এভাবে আপনার বিজনেসটি পরিচিত হয়ে উঠবে, এবং বিশ্বাসযোগ্য-নির্ভরযোগ্য হয়ে উঠবে৷
ওয়েবসাইট ছাড়া কি বিশ্বস্ত হওয়া সম্ভব না?
শুধুমাত্র ফেসবুকে বিজনেস করলে যে আপনি কাস্টমারদের ভরসা অর্জন করতে পারবেন না তা কিন্তু না, তবে ওয়েবসাইট থাকলে আপনার বিজনেসের প্রতি মানুষের আস্থা কয়েকধাপ বেড়ে যাবে অটোমেটিক্যালি৷ এইজন্য নিজের বিজনেসকে ব্র্যান্ড লেভেলে নিয়ে যেতে হলে ওয়েবসাইট থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ৷
নিজের বিজনেসের পাশাপাশি অন্যের বিজনেস থেকেও কিভাবে টাকা কামাবেন:
আপনার ওয়েবসাইটের মাধ্যনে অন্য কারো বিজনেসের প্রমোশন করেও টাকা উপার্জন করতে পারবেন৷ আপনার ওয়েবসাইটটি যখন নির্ভরযোগ্য হয়ে উঠবে এবং ভিজিটরের সংখ্যাধিক্য থাকবে তখন আপনার ওয়েবসাইটে অন্য কারো প্রোডাক্টের অ্যাড চালাতে পারবেন এবং তা থেকে আপনি মোটা অঙ্কের চার্জ গ্রহন করতে পারবেন৷
পরামর্শ:
তবে এতকিছু অর্জনের জন্য আপনাকে অবশ্যই কিছু খরচ করতে হবে, টাকা-পয়সা এবং সময়৷ কেননা ওয়েবসাইট বানানোর সাথে সাথেই ফল পেতে শুরু করবেন এমনটা হবে না, কিছুদিন সময় দিতে হবে, তারপর যখন ভিজিটর বাড়বে, আস্থা লাভ করবেন মানুষের, তখন আপনার বিজনেসের উপর প্রভাব পড়া শুরু হবে৷
অবশ্যই ওয়েবসাইটটি দক্ষ মানুষ দিয়ে বানাবেন এবং সুন্দরমতো ডিজাইন করাবেন৷
তাহলে আশা করছি দ্রুতই ফলাফল পেতে শুরু করবেন৷