ই-কমার্স ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আপনার ব্যবসাকে বৃদ্ধি করুন আরো কয়েকগুণ!
আমরা জানি ব্যবসার মূল উদ্দেশ্যই হয়ে থাকে বৃদ্ধি করা৷ প্রতিটি ব্যবসাকে বৃদ্ধির ভিন্ন ভিন্ন টেকনিক বা উপায় থাকে, তবে একটি উপায় এর কথা আপনাকে বলতে পারি— যার মাধ্যমে আপনি সব ধরনের ব্যবসাকেই বৃদ্ধি করতে পারবেন যদি ঠিকঠাক মতো সেটি ব্যবহার করতে পারেন, আর তা হচ্ছে একটি ই-কমার্স ওয়েবসাইট৷
আসুন জেনে নেই,
ই-কমার্স ওয়েবসাইট কাকে বলে?
ই-কমার্স বলা হয় অনলাইন বেইজড মার্কেটকে, এবং অনলাইন ভিত্তিক কেনাকাটাকে সহজ করার জন্য এবং ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে যোগাযোগ তৈরির মাধ্যম হিসেবে অর্থাৎ অনলাইনে ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত সবধরণের কাজের জন্য যে ওয়েবসাইটকে ডিজাইন করা হয় তাকেই ই-কমার্স ওয়েবসাইট বলে৷
ই-কমার্স ওয়েবসাইট কেন প্রয়োজন?
আপনার বিজনেসকে বা আপনার পণ্য সম্পর্কিত কোন তথ্যকে অনলাইনে প্রেজেন্ট করার জন্য ইন্টারনেটে কোন একটা স্পেস আপনার থাকা লাগবে, আর সেই পার্সোনাল স্পেসটিই হচ্ছে ওয়েবসাইট৷
ওয়েবসাইট হচ্ছে আপনার ক্রয়কৃত দোকানের মতো, যেটা না থাকলে আপনার ব্যবসা কখনো পুরোপুরি সেইফ হবে না৷ অর্থাৎ দোকান যদি ভাড়ায় নিয়ে থাকেন তাহলে যেকোন সময় আপনার হাত থেকে দোকানটি অন্য কারো হাতে চলে যেতে পারে, কিন্তু যদি দোকানটি নিজের জায়গায় হয় তাহলে এই সমস্যা হবে না৷ একই কথা ওয়েবসাইটের ক্ষেত্রেও। আপনি একটি ওয়েবসাইটের জন্য ডোমেইন-হোস্টিং কিনে নেওয়ার মানে হচ্ছে ইন্টারনেটের ঐ সাইটটি আপনার হয়ে গেল, আপনি যেভাবে ইচ্ছে সেভাবে সেটিকে পরিচালনা করতে পারবেন৷
আপনি একটি ই-কমার্স ওয়েবসাইটের মালিক কিভাবে হতে পারবেন?
জেনে নেওয়া ভাল, ই-কমার্স ওয়েবসাইট বিভিন্ন ধরনের হতে পারে— তাই আপনার বাজেট এবং পছন্দের উপর ডিপেন্ড করবে যে কোন ধরণের ওয়েবসাইটের মালিক আপনি হবেন৷ বাজেট কিন্তু আপনার বিজনেসের অবস্থার উপর ডিপেন্ড করে— আপনার বিজনেস যদি বড় ধরণের হয় তাহলে আপনার বেশি বাজেটের একটি ওয়েবসাইটের প্রয়োজন হবে, যাতে অধিক ফিচার ব্যবজার করা যাবে ৷ আর আপনার বিজনেস যদি ছোট হয় তাহলে আপনার ওয়েবসাইটটি অল্প বাজেটের মধ্যে হলেও চলবে৷
বেশি বাজেটের ওয়েবসাইট বানানোর জন্য— আপনি প্রথমত ডোমেইন-হোস্টিং কিনে নিবেন পছন্দমত নাম দিয়ে, এরপর কোন একটি ওয়েব-ডেভেলপমেন্ট কোম্পানির সাথে চুক্তি করে আপনার ওয়েবসাইটটি কাস্টমাইজ করে বানিয়ে নিবেন এবং একজন ভালো মানের ওয়েব-ডিজাইনারকে হায়ার করবেন আপনার ওয়েবসাইটটি ডিজাইন করানোর জন্য৷ এভাবে আপনি আপনার বাজেট অনুযায়ী একটি ওয়েবসাইট বানিয়ে নিতে পারবেন৷
আর যদি আপনার বিজনেস ছোট হয় সে ক্ষেত্রে আমি আপনাকে পরামর্শ দিব কোন একটি রেডিমেড ওয়েবসাইট বিক্রয়কারী কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করে তাদের ওয়েবসাইটগুলোর ডেমো দেখে তারপর আপনার বিজনেসের সাথে মিলিয়ে একটি রেডিমেড ওয়েবসাইট কিনে নিবেন৷ এতে আপনার খরচ এবং সময় উভয়টাই কম লাগবে৷ এক্ষেত্রে আমাদের সাথেও আপনি যোগাযোগ করতে পারেন।
আচ্ছা এবার তাহলে মূল পয়েন্ট কিভাবে ই-কমার্স ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আমাদের ব্যবসাকে বৃদ্ধি করতে পারি সেটা জেনে নেওয়া যাক—
ই-কমার্স ওয়েবসাইট কিভাবে আপনার বিক্রি বাড়াতে সাহায্য করবে?
ই-কমার্স ওয়েবসাইট বিক্রি বাড়াতে বিভিন্ন উপায়ে সাহায্য করে। বিস্তারিত নিম্নে দেওয়া হলো:
- ইচ্ছেমতো তথ্য দেওয়া যায়: ই-কমার্স ওয়েবসাইটগুলোতে প্রচুর পরিমাণে পণ্য এবং সার্ভিস দেখানো যেতে পারে। অর্থাৎ আপনার পণ্য বা সার্ভিস সম্পর্কিত সকল তথ্যই আপনি দিয়ে রাখতে পারবেন যাতে এটি কাস্টমারকে তাদের প্রয়োজনীয় পণ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করে। প্রত্যেকেই নিজ নিজ চাহিদা অনুযায়ী পণ্যের যে কোন ধরণের তথ্য দিয়ে সার্চ করলেই যেন আপনার ওয়েবসাইটটি খুঁজে পায় সেভাবেই আপনি তথ্য দিয়ে ভরপুর করে রাখতে পারবেন৷
- দোকান বন্ধ হয় না কখনো: ই-কমার্স ওয়েবসাইটগুলো ২৪/৭ খোলা থাকে। এটি কাস্টমারদেরকে তাদের সুবিধামত সময়ে কেনাকাটা করতে দেয়। অর্থাৎ আপনি ঘুমিয়ে থাকেন অথবা জাগ্রত, আপনার ব্যবসা ঠিকই চলতে থাকবে, আপনার যদি অফলাইনে কোন স্টোর থাকে তাহলে সেটা কিন্তু ২৪ ঘন্টা খোলা রাখতে পারবেন না, অপরদিকে ওয়েবসাইট ২৪ ঘন্টাই চালু থাকে, তাতে কাস্টমারের যখন ইচ্ছে তখনই আপনার ওয়েবসাইট ভিজিট করে আপনার ব্যবসা সম্পর্কে জানতে পারবে এবং ক্রয় করতে পারবে, এভাবে আপনি ঘুমিয়ে থাকলেও আপনার ব্যবসা বৃদ্ধি পেতে থাকবে৷
- টাকা সেফ হয়: ই-কমার্স ওয়েবসাইটগুলো পরিচালনা করার জন্য অফলাইন স্টোরের তুলনায় খরচ কম লাগে। অফলাইন স্টোর ক্রয় করতে যে পরিমাণ টাকা লাগবে ওয়েবসাইট বানাতে কিন্তু সেই পরিমাণ টাকা লাগবে না, আবার সার্বক্ষণিক স্টোর দেখাশোনা করার জন্য যে কয়জন কর্মচারীর প্রয়োজন হবে ওয়েবসাইট পরিচালনায় তার চাইতে কম লোক লাগবে, কেননা পণ্য সম্পর্কিত সকল তথ্য তো ওয়েবসাইটে দেওয়াই থাকবে৷ এবং আপনার টাকা সেফ হলে সেই টাকা দিয়ে নতুন পণ্য বাজারজাত করতে পারবেন, এভাবেই আপনার ব্যবসা বৃদ্ধি পেতে থাকবে৷
- বিজনেস এক জায়গায় সীমাবদ্ধ হয় না: ই-কমার্স ওয়েবসাইটগুলো বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের কাস্টমারের কাছে আপনার বিজনেসকে পৌঁছাতে পারে। সুতরাং একটি দোকান নিয়ে নির্দিষ্ট একটি এলাকার মধ্যে আপনার কাস্টমার সীমাবদ্ধ থাকবে না বরং আপনার পণ্যের মানের উপর ভিত্তি করে প্রতিনিয়ত আপনার কাস্টমার বাড়তে থাকবে এবং সেটা হতে পারে বিশ্বের যেকোন প্রান্তের কাস্টমারের মাধ্যমে৷ এটি আপনার বাজারকে সম্প্রসারণ করতে এবং বিক্রয় বৃদ্ধি করতে সহায়তা করবে৷
এভাবে তো আপনার ব্যবসা অটোমেটিক্যালি বৃদ্ধি পেতে থাকবেই, এছাড়াও, ই-কমার্স ওয়েবসাইটকে কাজে লাগিয়ে আপনি বিভিন্নভাবে আপনার ব্যবসা বৃদ্ধি করতে পারবেন:
- চ্যাটিং অপশন: যদিও পণ্য সম্পর্কিত সকল তথ্য ওয়েবসাইটে দেওয়াই থাকবে তারপরও যদি কারো কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে যেন জিজ্ঞেস করতে পারে সেইজন্য চ্যাটিং অপশন রাখা যেতে পারে, এতে ক্রেতাদের সাথে কোম্পানীর সম্পর্কও বৃদ্ধি পাবে এবং ক্রেতাগণ বেশিদিন স্থায়ী হবে৷
- সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (SEO): SEO হল এমন কৌশল যার মাধ্যমে মানুষ কোন কী-ওয়ার্ড ইউজ করে পণ্যের সার্চ করে থাকে সেগুলো শিখে সে অনুযায়ী টাইটেল ঠিক করা, এবং তার ভিত্তিতে অধিক মানুষের নিকট নিজের বিজনেসকে পৌঁছে দেওয়া যেতে পারে৷
- স্যোশাল মিডিয়া মার্কেটিং: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের পণ্যের মার্কেটিং করে স্যোশাল মিডিয়া ইউজারদের কাছে নিজের বিজনেসের ওয়েবসাইটটি পৌঁছে দেওয়া যেতে পারে, তাতে অধিক মানুষ ওয়েবসাইট ভিজিট করতে আসবে এবং পণ্য ক্রয় করবে৷
- ইমেইল মার্কেটিং: ইমেইল মার্কেটিং হল এমন কৌশল যার মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছে ইমেইল পাঠিয়ে পণ্য বা সার্ভিস সম্পর্কে তাদেরকে অবহিত করা যায়।
আশা করি, বুঝতে পেরেছেন ই-কমার্স ওয়েবসাইটগুলো যদি সঠিকভাবে ডিজাইন এবং পরিচালনা করা যায় তাহলে আপনার ব্যবসাকে বৃদ্ধি করতে এবং বিক্রয় বাড়াতে এটি একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হতে পারে।
তবে আপনাকে একটি বিষয়ে ভালভাবে খেয়াল রাখতে হবে সেটা হচ্ছে ওয়েবসাইটের টেকনিক্যাল সেফটি, অর্থাৎ যেন কোন হ্যাকিংয়ের শিকার না হোন৷ তাহলেই আশা করছি আপনি সফল হতে পারবেন, এবং আপনার ব্যবসা বৃদ্ধি পাবে কয়েকগুন৷